আশুরার রোজা কয়টি - আশুরার রোজার ফজিলত - আশুরার রোজার গুরুত্ব

এখানে আশুরার রোজা কয়টি, আশুরার রোজার ফজিলত এবং আশুরার রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আশুরার রোজা কয়টি এ বিষয়ে মহানবী (সাঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সমূহ আলোচনা থাকবে।তাই আশুরার রোজা কয়টি, আশুরার রোজার ফজিলত এবং আশুরার রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন
আশুরার রোজা কয়টি - আশুরার রোজার ফজিলত - আশুরার রোজার গুরুত্ব
আশুরার রোজা কয়টি ব্লগপোষ্ট। ছবি সংগৃহীতঃ 👆👆
মহরম হচ্ছে আরবী বছরের প্রথম মাস।এটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস।এই মাসকে ঘিরে অনেক ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিহীত রয়েছে।এই মাসেরই ১০ তারিখ মহামান্বিত পবিত্র আশুরার দিন।এই দিনকে অধিকাংশ মানুষ কারবালার সেই মর্মান্তিক ইতিহাসের জন্য জেনে থাকে তবে👇

আশুরার দিবসে ইসলামের পুর্বের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাবলী রয়েছে। যেহহুতু সর্বকালের উল্লেখ্যযগ্য ঘটনা হচ্ছে কারবালার প্রান্তরের সেই মর্মান্তিক কাহীনি।এই জন্যই বেশিরভাগ মানুষ  আশুরা মানে মনে করে শুধু কারবালার ইতিহাস👇

তবে এখানে শুধু আশুরা কে ঘিরে রোজা রাখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে।আশুরার সবথেক বড় আমল হচ্ছে রোজা রাখা।আর এই আশুরার রোজা কয়টি, আশুরার রোজার ফজিলত এবং আশুরার রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন👇

আশুরার রোজা সম্পর্কে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশ কিছু হাদীস রয়েছে। আশুরার রোজা সম্পর্কে একটি হাদিস হচ্ছে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত ইমাম বুখারী (রহ) বলেন

 " হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে যখন মদিনায় পৌঁছালেন তখন তিনি দেখেন মদিনার ইহুদীরা আশুরার দিনের রোজা পালন করছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন এই দিনে তোমরা কোন কারণে রোজা পালন করো?

উত্তরের তারা বলল এই দিনটি তাদের জন্য অনেক বড় একটি দিন। কারণ এই দিনে মহান আল্লাহ  মূসা (আঃ) তার সঙ্গীদেরকে ফেরাউনের কবর হতে মুক্তি দান করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।

এইজন্য মহান রবের নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মুসা (আঃ) এই দিন রোজা রাখতেন। তাই আমরাও আশুরার এই দিনের রোজা পালন করে থাকি। ইহুদীদের এরূপ জবাব শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, মুসা (আঃ) এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী।

অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবীদের কথা পালন করার অনুমতি প্রদান করেন (বুখারী-হাদিসঃ ৩৩৯৭ মুসলিম-হাদিসঃ ১১৩৯)

অতএব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর এই হাদীসটি থেকে আমরা বুঝতে পারি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আশুরার রোজা পালন করেছেন এবং উম্মতকেও তা পালন করার আদেশ দিয়েছেন।

হুজুর পাকের নির্দেশিত সকল হুকুম আহকাম আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস সমূহ আরো রয়েছে। নিচে আশুরার রোজা সম্পর্কে আরো হাদিস পেশ করা হলো

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন "রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে মহরম মাসে আশুরার রোজা" (সুনানে কুবরা, হাদিসঃ৮৪২১০)

হযরত আবু কাদাতা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ সমূহ মুছে দেয় (মুসলিম, হাদিসঃ১১৬২)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আশুরার দিনের রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর সাহাবীরা অবাক হয়ে বললেন, হে রাসূলুল্লাহ বিধর্মীরা তো এই দিনকে বড়দিন মনে করে,

এই দিনে তারাও রোজা পালন করে আমরাও যদি এই দিন রোজা রাখি তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন (তারা যেহেতু একদিন রোজা পালন করে) আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে আমরা 9 তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব ইনশাআল্লাহ (মুসলিম, হাদিসঃ১১৩৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন " তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো তবে এই ক্ষেত্রে ইহুদীদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন অতিরিক্ত একটি রোজা পালন করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ২১৫৪)

এই হাদিস থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তা হচ্ছে আশুরার রোজা হবে অবশ্যই দুইটি। কারণ এটি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ। মহরম মাসের ১০ তারিখে আমরা একটি রোজা পালন করব এবং

অতিরিক্ত একটি রোজা পূর্বের দিন 9 তারিখে অথবা পরের দিন ১১ তারিখে অতিরিক্ত একটি রোজা রাখব। এতে করে ইহুদিদের সাথে মুসলিম উম্মাহের কোন সামঞ্জস্য থাকবে না।

হযরত জাবের  (রা:) সূত্রে হাদিস শরীফের মধ্যে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ করতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ ব্যাপারে তিনি নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিতেন।

যখন রমজান মাসে রোজা ফরজ করা হইলো তখন তিনি আশুরার রোজার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশও দিতে না এবং নিষেধও করতেন না এবং এই বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজখবরও নিতেন না (মুসলিম শরীফ- ১১২৮)

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি আশুরার রোজা সেই সময় কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উক্ত হাদিস থেকে এই রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়। পরে রমজান মাসের রোজা নাযিল হওয়ার পর এই রোজা নফল হয়ে যায়।

হযরত হাফসা  (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতেন না তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে আশুরার রোজা(নাসায়ি শরিফ)

হযরত আবু মুসা আশ আরি (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আসরের দিন ইহুদিরা ঈদ পালন করত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের কে তিনি সেদিন রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন (বুখারীঃ২০০৫, মুসলিমঃ১১৩১)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পোষ্ট পড়ে আমাদেরকে আপনার মূল্যবান মন্তব্য লিখুন। আপনাদের প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়

comment url